ওষুধ না দেওয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধর, বিক্রয় প্রতিনিধি আটক ২

ওষুধ না দেওয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধর, বিক্রয় প্রতিনিধি আটক ২

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসক কে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস মাদবরকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ডামুড্যা বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। তার ভাতিজা একটি ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশন অফিসার শহীদুল ইসলাম মৃধাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আটক জুলহাস উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. শহিদুল ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস (ঔষধ কোম্পানি) এর মেডিকেল প্রমোশন অফিসার।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালসের মেডিকেল প্রমোশন অফিসার শহিদুল ইসলাম মৃধার পছন্দের ওষুধের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন নুসরাত তারিন তন্বীর সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত হয়। শহিদুল ইসলাম মৃধা তার মামা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবরকে বিষয়টি জানান। বুধবার রাতে ডামুড্যা বাজারের আলী আজম জেনারেল হাসপাতাল থেকে এক রোগীর চিকিৎসা শেষে বাসার কাছে এলে মহিলা চিকিৎসক নুসরাত তারিন তানবীর জুলহাস মাদবর, তার ছেলে লিখন মাদবর, ডামুড্যা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলামের উপর হামলা চালায়। মৃধা, ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রমোশন অফিসার মো. এবং আরও কিছু। এ সময় বাড়ি থেকে নুসরাত তারিন তানবীরের মা মাসুমা খাতুন ও চিকিৎসক স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁই এলে তাদেরও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা নুসরাত তারিন তন্নি ও মাসুমা খাতুনকে উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় নুসরাত তারিন তানবীরের স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁই বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ডামুড্যা থানায় ৪ আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি মামলা হিসেবে নিয়ে বিকেলে জুলহাস মাদবর ও শহিদুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মহিলা চিকিৎসক নুসরাত তারিন তানবি বলেন, ‘ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম আমাকে বারবার তার কোম্পানির ওষুধ লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। আমি প্রত্যাখ্যান করলে সে আমার উপর রেগে যায়। গতরাতে শহিদুল ইসলাম, স্থানীয় জুলহাস মাদবর, তার ছেলে লিখন মাদবরসহ বেশ কয়েকজন আমার ওপর হামলা চালায়। তারা আমার মুখে ধাতব জিনিস দিয়ে আঘাত করলে আমি আহত হয়েছিলাম। আমার মা ও স্বামী চিৎকার শুনে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বীর স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘তারা তাদের প্রেসক্রিপশনে কিছু নিম্নমানের ওষুধ লিখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে সব কোম্পানির ওষুধ থোক লেখার সুযোগ নেই। তাই আমার স্ত্রী রাজি হয়নি। তারা স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় গতকাল রাতে আমার স্ত্রী ও আমাদের ওপর হামলা চালায়। ডাক্তাররা চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য গ্রামে কাজ করে এবং তারা আক্রান্ত হলে কেউ এখানে চিকিৎসা সেবা দিতে আসবে না। আমরা এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

আহত মাসুমা খাতুন বলেন, ‘এখানে একজন নারী চিকিৎসক নিরাপদ নয়। আমরা কিভাবে থাকব? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা চিকিৎসক, তার স্বামী ও মায়ের ওপর হামলার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয় এবং এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। কেসটি অনুসন্ধনাধীন আছে. তদন্ত শেষ হলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Back To Top