গভীর সংকটে পোশাক খাত

গভীর সংকটে পোশাক খাত

গভীর সংকটে পোশাক খাত।দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত, গভীর সংকটে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের একক বাজার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংকটের কারণে রপ্তানি কমে গেছে। কমেছে ইউরোপের বাজারে। বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা। অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তান থেকে অর্ডার বেড়েছে। প্রধান বাজারে রপ্তানি কমে যাওয়ায় মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

জানা যায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া ডলার সংকট, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের পোশাক খাতে। দাম বাড়ানোর পরও শিল্প মালিকরা গ্যাস পাচ্ছেন না। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা। অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। সেক্টর স্টেকহোল্ডাররা বলছেন যে ইউরোপীয় শ্রম নিয়ন্ত্রণ বিধি এবং মার্কিন শ্রম নীতির উপর ফোকাস পোশাক কারখানার মালিকদের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, পোশাক রপ্তানি কমেছে কারণ পশ্চিমের খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলি পোশাক মজুত করে এবং ভোক্তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভোগে। গ্যাস সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে টেক্সটাইল মিলগুলো। সরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও দাম বাড়ায়নি। শুল্ক বৃদ্ধির আগে ও পরে গ্যাস সরবরাহের অবস্থা শোচনীয় রয়েছে। দাম বাড়িয়েও শিল্প মালিকরা গ্যাস পাচ্ছেন না। কলকারখানা বন্ধ থাকায় শুধু রপ্তানিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, দিন দিন বাড়ছে বেকারত্ব। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল মিলের অনেক শ্রমিক বেকার।

এ প্রসঙ্গে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ড. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “ডলার সংকটের কারণে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে সমস্যা হচ্ছে। জ্বালানি সংকট রয়েছে। শিল্পে গ্যাসের চাহিদা নেই। মজুরি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের রপ্তানি বাড়েনি। রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে পর্যাপ্ত অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ২৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৬ মিলিয়ন ডলারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম বাজার জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭ শতাংশ কমে $২.৮৬ বিলিয়ন হয়েছে। ইতালিতে গার্মেন্টস রপ্তানি কমেছে ৩.৮৯ শতাংশ। বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গত বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) 25 শতাংশ কমে $6.79 বিলিয়ন হয়েছে। জানুয়ারী-নভেম্বর 2022 এর মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ ছিল 904 মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কানাডার তৈরি পোশাক রপ্তানি ৪ শতাংশ বেড়ে ৭৪১.৯৪ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ইউরোপ-আমেরিকাতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমে গেলেও ভারত ও পাকিস্তান থেকে বেড়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল ট্রেড ডেটা (OTAX) অনুসারে, গত বছরের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি 1.50 শতাংশ বেড়েছে। নভেম্বর 2023 সালে পোশাক রপ্তানি ছিল 6.9 বিলিয়ন বর্গ মিটার। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন বর্গ মিটার। পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানির 2.80 শতাংশ আমেরিকায়। পাকিস্তান 2023 সালের অক্টোবরে 8 বিলিয়ন বর্গ মিটার পোশাক রপ্তানি করেছে। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি ছিল 7.8 বিলিয়ন বর্গমিটার।

এ প্রসঙ্গে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বিশ্ববাজারে দরপতন হয়েছে। একটি খারাপ অবস্থা।শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের রপ্তানিও কমছে।অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।রপ্তানি আয়ের উপর এর খুব একটা প্রভাব পড়বে না।

গভীর সংকটে পোশাক খাত

গভীর সংকটে পোশাক খাত গভীর সংকটে পোশাক খাত গভীর সংকটে পোশাক খাত

Back To Top