গৃহকর্মীদের বারবার নির্যাতনের কারণ জানতে চায় পুলিশ

গৃহকর্মীদের বারবার নির্যাতনের কারণ জানতে চায় পুলিশ

ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার, যারা নবম তলা থেকে পড়ে গৃহকর্মী প্রীতি উরাং (১৫) এর মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে রয়েছেন, জেল গেটে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তাদের কাছে গৃহকর্মীদের বারবার নির্যাতনের কারণ জানতে চায়।

বিশেষ করে নবম তলায় গৃহকর্মী প্রীতি উরংকে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত্যুর কারণ জানতে চান তদন্ত কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, এই মৃত্যুর ছয় মাস আগে সাত বছর বয়সী ফেরদৌসী নামের আরেক গৃহকর্মী একইভাবে অষ্টম তলা থেকে পড়ে গেলেও রহস্য উদঘাটন করতে চেয়েছিল পুলিশ। সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। তাদের ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, গত ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই বাড়িতে বারবার পারিবারিক সহিংসতার ঘটনার কারণ জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আশফাক ও তানিয়াকেও কেন মৃত কিশোরী গৃহকর্মীকে হাত-পা বেঁধে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল, তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণে অবহেলায় মৃত্যু ঘটানোর ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তদন্তে হত্যা বা অন্য কিছুর প্রত্যক্ষ আলামত পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ অনুরূপ ঘটনা বারবার ঘটার কথা নয়। বাড়ি থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের জেনেভা ক্যাম্প সংলগ্ন একটি ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে গৃহকর্মী প্রীতি উরাং (১৫) মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পড়ার আগে প্রীতি কিছুক্ষণ জানালার গ্রিলে ঝুলে ছিলেন। তারপর ওই ভবন থেকে পড়ে যান। মেয়ে পড়ার পর অনেক মানুষ জড়ো হয়। ভবনের নিরাপত্তা কর্মীদের দ্রুত খবর দেওয়া হলেও তারা প্রথমে দরজা খুলতে চাননি। মেয়েটি ওপর থেকে পড়ে গেলে পাশের ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী আনাসসহ কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ সময় স্থানীয়রা বাড়ির গেটে জড়ো হয়ে তরুণীকে হত্যার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশ আশফাক, তানিয়াসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন প্রীতির বাবা লোকেশ উরং বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।

আলোচিত এ ঘটনায় প্রীতির বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাদিয়া। সুরথাল রিপোর্টে প্রীতির শরীরে কিছু নতুন ও পুরানো দাগের কথা বলা হয়েছে।

এসআই সাদিয়া বলেন, পড়ে যাওয়ার পর লাশের অবস্থা এমন যে, এসব চিহ্ন আলাদা করা কঠিন। ময়নাতদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। জানা গেছে, প্রীতির গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিটিংগায়।

তদন্তে জড়িত একজন কর্মকর্তার প্রশ্ন- ইংরেজি ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হকের বাড়ির ভেতরে শিশু গৃহকর্মী নবম তলা থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা কি ঘটেছে? তারা কি বাড়িতে শারীরিক, মানসিক বা যৌন নিপীড়িত হয়? নাকি শিশুদের ছুড়ে ফেলা হচ্ছে?

প্রীতির বাবা অভিযোগ করেন, অভাবের কারণে দুই বছর আগে তিনি মিন্টু নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে ছোট মেয়েকে সাংবাদিক আশফাকুল হকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পাঠান। কিন্তু আশফাকুল হকের পরিবার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তার মেয়েকে দেখা করতে দেয়নি। মাসে এক-দুবার গৃহকর্তার মোবাইলে যোগাযোগ করে কথা বলত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয় মাস আগে ফেরদৌসি একই বাড়ি থেকে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনায় শিশুটির মা জোছনা বেগম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সৈয়দ আশফাকুল হক, তানিয়া খন্দকার এবং আসমা আক্তার শিল্পী নামে এক নারীকেও আসামি করা হয়। পরে মামলার আসামীরা বাদীর সাথে আদালতে মীমাংসা করে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

Back To Top