ধর্ষণের ঘটনার দায় এড়াতে পারে না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ : র‌্যাব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় Information: বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমার আগামী প্রজন্মকে জাহাঙ্গীরনগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার স্বপ্ন দেখি। সাম্প্রতিক গণধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী বিষয়টি খুবই ভীতিজনক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এখনই কঠোর হতে হবে। যদি তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং সহযোগিতা চায়, আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব। আমরা মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ সম্পদ, জাতির ভবিষ্যৎ এভাবে নষ্ট করা যাবে না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, আমরা সবাইকে খারাপ বলব না। তাই আমি মনে করি তাদের শুধু এখনই নয়, সব সময় নজরদারিতে রাখা উচিত। কারণ ছাত্রদের বয়স খুবই কম। অহরতি মামুনের মতো লোকজন শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দিচ্ছে। মামুনের মতো লোকেরাই ছাত্রদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে, নিজেরাই অপকর্ম করছে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে স্বামী তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চারজনকে গ্রেপ্তার করে। ওইদিনই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে গণধর্ষণের মামলা করেন (নং- 10) আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে গণধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মো. মামুনুর রশিদ মামুন ও নওগাঁ সদর এলাকার অন্যতম আসামি মো. মুরাদকে আটক করেছে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা গণধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

দুষ্টু ছাত্ররা মামুনের ইয়াবায় মত্ত থাকত

কমান্ডার মঈন জানান, জুরাইনে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করা মামুন ২০১৭ সাল থেকে পুরোদস্তুর মাদক ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে। প্রতি মাসে টেকনাফ থেকে প্রায় সাত থেকে আট হাজার ইয়াবা এনে আশপাশসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করত। এলাকা মামুন মাদক সেবনসহ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রী হোস্টেলে রাত কাটাতো। একই এলাকায় থাকার সুবাদে তিন-চার বছর আগে ভিকটিমের স্বামী জাহিদ মিয়া রবিনের সঙ্গে মামুনের পরিচয় হয়। মামুন রবিনের সাথে মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক বিক্রি করতো।

কয়েকদিন আগে মামুনের বাসস্থান নিয়ে সমস্যা হলে সে প্রায় তিন থেকে চার মাস ভিকটিমের বাড়িতে সাবলেট হিসেবে থাকে। মামুনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় আটটি মাদকের মামলা রয়েছে, এসব মামলায় তিনি একাধিকবার জেল খেটেছেন। আরতি মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারির একটি জিডি রয়েছে।

মুস্তাফিজের ইচ্ছায় মামুনের মাস্টারপ্ল্যান

কমান্ডার মঈন জানান: ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি মোস্তাফিজুর রহমান মামুনকে অনৈতিক কাজের ইচ্ছার কথা জানান। আর মামুন তার ইচ্ছা পূরণের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান সাজায়। ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদ মিয়া মামুন রবিনকে ফোন করে জানায় যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান পেয়েছে এবং রবিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে যারা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। রবিন আসলে মুস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক এবং হাসানুজ্জামানকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরই মধ্যে মামুন রবিনকে অনুরোধ করে তার ঘরের জামাকাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র একটি ব্যাগে রেখে এখনই দিতে। পরে রবিন তার স্ত্রীকে একটি ব্যাগে কাপড় আনতে বলে। রাত নয়টার দিকে ভিকটিম একটি ব্যাগে কাপড় নিয়ে এলে মামুন ও মোস্তাফিজ তাদের সহযোগী মুরাদকে কাপড়ের ব্যাগ ও ভিকটিমের স্বামী রবিনকে হলে পাঠায়। এর কিছুক্ষণ পর মুস্তাফিজ ও মামুন ভিকটিমকে জোর করে হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। পরে তারা নির্যাতিতাকে হুমকি দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বলে। মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রুমে গিয়ে নির্যাতিতার স্বামীকে বাসায় যেতে বলেন। পরে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে রবিন সব ঘটনা শুনে থানায় গিয়ে মামলা করেন।

Back To Top