সাংসদ আনার হত্যার যৌথ তদন্ত সফল: হারুন অর রশিদ

সাংসদ

‘ওয়াটার থিওরি’ অনুসরণ করে কলকাতায় খুন হওয়া বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আন্নার হত্যাকাণ্ডের সফল সমাধান হয়েছে। ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ মনে করেন, কলকাতায় আলোচিত হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই তত্ত্বই সাফল্য দিয়েছে। সাংসদ আন্না হত্যাকাণ্ডের যৌথ তদন্ত সফল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্না হত্যা মামলায় ডিবির ভারত সফর শতভাগ সফল হয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের ডিবি প্রধান এ কথা বলেন।

কলকাতায় খুন হওয়া বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আন্না হত্যাকাণ্ডে এক নারীসহ তিন আসামিকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। তাদের এক অভিযুক্তকে জেরা করে ‘জল তত্ত্ব’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার মানে তিনি ওপর থেকে পানির আওয়াজ শুনতে পেলেন। আশেপাশের পরিস্থিতি বিবেচনা করার পরে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিকে কমোড, সেপটিক ট্যাঙ্ক এবং পয়ঃনিষ্কাশন লাইন চেক করার জন্য অনুরোধ করে। এরপর সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কয়েক কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়।

ডিবি প্রধান হারুন বলেন, “প্রাথমিকভাবে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হওয়া এই মাংস এমপি আনারের বলে মনে করা হলেও এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হতে ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।” ওই দিন ডিবি প্রধান আরো বলেন, সিআইডিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে লাশের টুকরো বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।

উদ্ধারকৃত মাংসের নমুনা ইতিমধ্যেই সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল) পাঠানো হয়েছে সেটি এমপি আনারের মৃতদেহ কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য। প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে। সেক্ষেত্রে সাংসদ আনারের মেয়ে মুমতারিন ফিরদৌস ডোরিনকে কলকাতায় ডেকে আনা হয়েছে। ডিবি প্রধান বলেন, আমরা সিআইডিকে খুব দ্রুত এসব পরীক্ষা করার অনুরোধ করেছি।

খুব শিগগিরই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কলকাতায় আসবেন এমপি আনারের মেয়ে ডোরিনা। তিনি সম্ভবত ভারতে আসার জন্য ভিসাও পেয়েছেন। গোয়েন্দাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় পৌঁছেছে। কলকাতা থেকে তারা নিউটাউন থানায় যান। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সঙ্গে তারা কৃষ্ণমতি বাগজোলা খাল পরিদর্শন করেন। নিউটাউনে যথাক্রমে সঞ্জীবের বাসভবন, সিআইডি বিল্ডিং, হাতিশাল খাল পরিদর্শন করার পরে, বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করার পাশাপাশি, গোয়েন্দা প্রধান কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়াল, সিআইডি এডিজি আর রাজশেখরনের সাথেও কথা বলেন।

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এমপি আন্না হত্যার ঘটনায় কলকাতা ও বাংলাদেশে দুটি জায়গায় মামলা হয়েছে এবং সে কারণেই আমরা তদন্ত করতে কলকাতায় এসেছি এবং তদন্তের উদ্দেশ্যে সিআইডির প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে গেছে। ” এরই মধ্যে মূল খুনিকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা অনেক কথাই স্বীকার করেছে। তারা কীভাবে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, বাংলাদেশে কোথায় তাদের দেখা হয়েছিল, তারা কলকাতায় কোথায় ছিল, তারা কী করেছিল, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার।

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, “বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৬২, ৩৬৪ ধারা অনুযায়ী। লাশ বা শরীরের বিভিন্ন অংশ, খুনির ঘড়ি বা অন্য কোনো অংশ উদ্ধার করা না গেলে মামলার সমাধানে সামান্য সমস্যা হয়। আর সে কারণেই। আমরা এসেছি, আমাদের মূল কাজ ছিল বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান, কলকাতায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা এবং তারা যেখানে গেছে সেখানে অভিযান চালানোর কারণ হলো সাংসদ আনারের লাশ পাওয়া বা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কারণ একটি মামলা নিষ্পত্তির জন্য, প্রমাণ, মেডিকেল রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট এবং লক্ষণ প্রয়োজন.

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ ছিল অভিযুক্তদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য কলকাতা পুলিশের কাছে শেয়ার করা এবং তাদের কাজে সাহায্য করা। আমরা মনে করি আমরা তাদের সাহায্য করতে পেরেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রমাণ সংগ্রহ করা, সিআইডিকে সহযোগিতা করা, ডিজিটাল প্রমাণ নিজের চোখে দেখা, কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলার সঙ্গে কথা বলে আমাদের দেশে গ্রেফতারকৃত আসামিদের বক্তব্য সংগ্রহ করা, আসামিরা কোথায় গেছে তা খুঁজে বের করা। – সে ক্ষেত্রে আমরা 100% সফল।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী দিনে কোনো অপরাধী যদি বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে এবং কলকাতাকে স্বর্গীয় আশ্রয় বলে মনে করে- তা সম্ভব হবে না। ফলে কলকাতা থেকে আরও দ্রুত গ্রেফতার করতে পারব।

এমপি আনারকে 13 মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনে শেষ দেখা গিয়েছিল। সেদিন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসামিদের একজন এমপি আনারের বাল্যবন্ধু শাহীন। ইতিমধ্যেই গা ঢাকা দিয়েছেন। শাহীন নেপাল হয়ে দুবাই, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আরেক আসামি সিয়াম বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছেন। ডিবি হারুন জানান, তাদের দুজনকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “একজন অভিযুক্ত কাঠমান্ডুতে, অন্যজন আমেরিকায়। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার, সিআইডি প্রধানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কাঠমান্ডুতে সিয়ামের অবস্থান সিআইডি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। নেপালের কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার।

হারুন বলেন, এই মামলার মূল হোতা আখতারুজ্জামান শাহীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে আমরা মনে করি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে, সেহেতু তাদের উচিত শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত নেওয়ার কথা বলা। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের আইজির সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। তাকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলে চিঠি দেওয়া হবে। চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশে আমেরিকান দূতাবাসকে জানানোর পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কথা বলে আখতারুজ্জামান শাহীনের বিষয়টি সরাসরি জানানো হবে।

অন্যদিকে, আমরা কাঠমান্ডুতে সিয়ামের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নেপালে চিঠি পাঠিয়েছি। আমরা নেপালের সকল সংস্থাকে জানিয়েছি যে সিয়াম বর্তমানে নেপালে অবস্থিত। আমরা মনে করি খুব শিগগিরই একটা ভালো খবর আসবে বলে জানান ডিবি প্রধান।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে ভারতে আসার পর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কাছে বরানগরে দীর্ঘদিনের বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে যান সাংসদ আনার। আর পরের দিন ১৩ তারিখ চিকিৎসার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় গোপাল বিশ্বাসকে ইতিমধ্যেই জেরা করেছে নিউ টাউন পুলিশ ও সিআইডি আধিকারিকরা। গোপাল বিশ্বাস বর্তমানে পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। ওই গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গেও কথা হয় ডিবির গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল।

Back To Top